সমস্ত লেখাগুলি

সৃষ্টিতত্ত্ব -
Mahbubur Rahman
March 10, 2025 | বিজ্ঞানমনস্কতা | views:76 | likes:0 | share: 1 | comments:0

মানুষের চিন্তাজগত রুদ্ধ হয়ে যায় যখন সে ভাবতে থাকে এই বিশ্ব জগতের অস্তিত্ব কেন আছে? যদি অস্তিত্ব না থাকত তাহলে সেই কোন কিছুর অস্তিত্বহীন জগতের অস্তিত্বই বা কেন? একটু চোখ বন্ধ করে সেই ফাঁকা জগতের কথা চিন্তা করি। কল্পনায় ভেসে উঠবে এক অন্তহীন অন্ধকার জগতের ছবি। প্রশ্ন জাগবে এই অন্তহীন অন্ধকার জগতই বা কেন আছে? এই জগত না থাকার অবস্থাটাই বা কেমন? সেই অবস্থার কোন চিত্র আমরা কল্পনাতেও আনতে পারি না।  এই অস্তিত্ব ও অনস্তিত্বের প্রশ্নটি আদিকাল থেকে মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। এই আছে বা নাই এর প্রশ্নটি একটি দুষ্ট চক্র। এই চক্র থেকে বের হওয়ার কোন উপায় নেই। আছে এর অস্তিত্ব কি নাই থেকে? নাই এর অস্তিত্ব আবার কোন আছে এর গর্ভে?

 এই প্রশ্ন অনুসন্ধানী মানুষদের কাছে, দার্শনিকদের কাছে এক বিরাট প্রশ্ন। কোন কিছু না থাকাটা কি স্বাভাবিক নাকি কোন কিছু থাকাটা স্বাভাবিক? এক্ষেত্রে কোন কিছু না থাকা অবস্থাটি কোন কিছু থাকার অবস্থা থেকে বেশী স্বাভাবিক মনে হয়। কারণ কোন কিছু না থাকা অবস্থা থেকে কোন কিছু থাকার অবস্থার উদ্ভব ঘটতে পারে। এখন এই উদ্ভব কি আপনা আপনি হতে পারে? অনেক দার্শনিক মনে করেন কোন কিছুর উদ্ভব আপনা আপনি ঘটতে পারে না। কোন পরম শক্তি এই উদ্ভবের ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। এই চিন্তা থেকেই সৃষ্টি তত্ত্বের জন্ম।

আদিম যুগে মানুষ সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিল।তাদের চিন্তার জগত সেখানেই সীমাবদ্ধ ছিল। প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তিকে তারা পূজা করত। প্রকৃতির বিভিন্ন জীব জন্তু ও বস্তু ছিল তাদের দেবতা। এই দেবতাদের অবস্থান ছিল এই পৃথিবীতেই। এই দেবতারাই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের পূর্বপুরুষদের একটি টেরিটরি দিয়েছেন। এই চিন্তার অনুসারীদের বলা হয় প্রকৃতি পূজারী। পরবর্তীতে দার্শনিকরা যখন  আকাশের গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করলেন তখন তারা বিভিন্ন গ্রহ নক্ষত্রের মধ্যে তাদের দেবতাদের খুঁজে পেলেন। তারও পরে দার্শনিকরা  যখন বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড নিয়ে চিন্তা শুরু করলেন তখন তারা ভাবলেন এই বিশ্ব জগত সৃষ্টির পেছনে নিশ্চয়ই একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন। এই চিন্তা থেকে  প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বে প্রথম জরাস্থ্রু এক ঈশ্বরবাদের জন্ম হোল। তাদের সৃষ্টিকর্তার থাকেন এই বিশ্ব জগতের বাইরে আর একটি জগতে। সেখানে অবস্থান করেই তিনি মানুষের জন্য এই বিশ্ব জগত সৃষ্টি করেছেন। পরবর্তীতে এই এক সৃষ্টিকর্তা ও দুই জগতের ধারণা নিয়ে আরও কিছু ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে।

এই পর্যায়ে এসে দার্শনিকদের এই ভাবনা তখনি সত্যে পরিণত হোল যখন সৃষ্টিকর্তা মানুষের সাথে নিজেই যোগাযোগ স্থাপন করলেন কয়েকটি ঐশী গ্রন্থের মাধ্যমে। প্রতিটি সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের স্ব স্ব গ্রন্থের উপর বিশ্বাস স্থাপন করল এবং এভাবে মানুষ তাদের সৃষ্টি তত্ত্বের জিজ্ঞাসার উত্তর পেয়ে যায়। সম্প্রদায়-গত সামাজিক জ্ঞানে সৃষ্টিতত্ত্ব প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেল।  সাধারণ মানুষ হোল মূলত অনুসরণকারী। তার সম্প্রদায় থেকে সে যে জ্ঞান লাভ করেছে সে সেই জ্ঞানেরই অনুসরণ করছে। এই জ্ঞানের বাইরে তারা আর কিছু গ্রহণ করতে পারে না।

কিন্তু অনুসন্ধানী মানুষ তথা দার্শনিকরা এখানেই সন্তুষ্ট হতে পারেন নাই। তাদের প্রশ্ন এই বিশ্ব জগত সৃষ্টি হয়েছে অন্য এক জগত থেকে অর্থাৎ এই বিশ্ব জগতের অস্তিত্বের জন্য দায়ী অন্য এক জগত, তাহলে কি সেই জগতেরও উৎপত্তির কারণ অন্য আর এক জগত? কোন কিছু যদি আপনা আপনি উৎপত্তি না হতে পারে তাহলে সব উৎপত্তির পিছনেই তো আর একটি উৎপত্তিগত কারণ থেকে যায়? এই জগতের উৎপত্তির কারণ আর একটি জগত এবং তার উৎপত্তির কারণ অন্য আর একটি জগত, এভাবে জগতের অসীম এক চেইন তৈরি হয়ে যায়।  তাহলে তো কোন কিছু নাই বলে কোন অবস্থা নাই। কোন কিছু নাই থাকাটা যেখানে স্বাভাবিক ছিল সেখানে কোন কিছু থাকাটাই স্বাভাবিক অবস্থা। তাহলে নাই থেকে উৎপত্তির কোন কারণ থাকে না, কোন কিছু আছে এবং সর্ব অবস্থাতেই সেটা আছে।

এই ধারণা মেনে নিলে আবার সৃষ্টিতত্ত্ব থাকে না। কারণ কোন কিছু নাই এর জগত না থাকলে সৃষ্টি হবে কোথায়? কারণ সবটুকু জগতই তো কোন কিছু আছে জগত দ্বারা পরিপূর্ণ। সৃষ্টিতত্ত্ব অনুযায়ী স্রষ্টা সর্বব্যাপি বিরাজমান। অর্থাৎ অসীম জগতে এমন কোন স্থান নাই যেখানে স্রষ্টার অস্তিত্ব নাই। অসীম জগতে স্রষ্টা নিজেই নিজের সৃষ্টি। সুতরাং স্রষ্টাকে সৃষ্টি করার জন্য অসীম জগতের বাইরে যেমন কোন জগত থাকতে পারে না   তেমনি স্রষ্টার অস্তিত্ব পূর্ণ কোন জায়গায় নতুন কোন জগতের সৃষ্টিও সম্ভব নয়।

অনুসন্ধানী যুক্তিবাদী দার্শনিকরা এই জায়গায় এসে থেমে যান। কারণ আপাতত যুক্তির সবকটি পথ তারা যাচাই করে দেখে ফেলেছেন। কিন্তু অনুসন্ধানী বস্তুবাদী দার্শনিকরা আরও কিছুদূর এগুতে চান। তাদের পদ্ধতি হোল ধারণাকে তত্ত্বে রূপ দেয়া এবং সেই তত্ত্বের সত্যতা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যাচাই করা। গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞান হোল তাদের পর্যবেক্ষণের হাতিয়ার।  

তারা শুরু করেন বাস্তব বস্তু জগত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। তারা দেখেন প্রকৃতিতে যা কিছুর বা রূপের অস্তিত্ব রয়েছে সেগুলো পূর্বাপর এক বা একাধিক রূপের রূপান্তরিত ফল। পূর্বাপর রূপের মধ্যে পরবর্তী রূপে রূপান্তরিত হওয়ার উপাদান ও সম্ভাবনা থাকে  বলেই পরবর্তি রূপে রূপান্তর হওয়া সম্ভব হয়। এই সম্ভাবনা আবার কিছু শর্তের অধীন। যেমন বাষ্পের পূর্বাপর রূপ জল। জলের মধ্যে বাষ্পের সকল উপাদান রয়েছে এবং কিছু শর্তাধীনে জল বাষ্পে রূপান্তরিত হতে পারে। প্রকৃতির অনেক রূপান্তরই চক্রাকার। আবার এই চক্রাকার রূপান্তরই এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত হচ্ছে। প্রকৃতিতে রূপান্তর একটি সরল অবস্থা থেকে ক্রমশ জটিল অবস্থায় রূপান্তরিত হচ্ছে। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে এনট্রপি বলা হয়।  আবার সকল অবস্থা বা রূপের মূল উপাদান হোল অণু পরমাণু এবং রূপান্তর ঘটে কয়েকটি বল বা শক্তির দ্বারা। মহা বিশ্বের সকল গ্রহ নক্ষত্র, ছায়াপথ সকল কিছুই অসংখ্য অণু পরমাণু নিয়ে গঠিত।  প্রতিটি পরমাণু আবার কিছু ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন নিয়ে গঠিত। ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রনের পূর্বাবস্থা হোল এক সেট কণা। এগুলো কোন ধারণা নয়। বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ দ্বারা এগুলো প্রমাণিত সত্য বলে গৃহীত হয়েছে।

 কিন্তু বৃহৎ বস্তুগুলির আচরণ পরমাণু জগতের আচরণ থেকে ভিন্ন। প্রতিটি একই ধরণের রূপ বা অবস্থার নিজস্ব গুনাগুণ বা আচরণ বিধি রয়েছে। এই মহা বিশ্বের সর্বত্র আমারা যে অসংখ্য গ্রহ, নক্ষত্র, নক্ষত্রপুঞ্জ, সৌর জগত, ছায়াপথের দেখা পাই সেগুলো হোল বৃহৎ বস্তুপিণ্ড। মহাবিশ্বের এই অবস্থায়  দেখা যায় সকল ছায়াপথগুলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ যে স্পেস টাইমে ছায়াপথগুলো অবস্থান করছে সেই স্পেসটাই অতীত থেকে সম্প্রসারিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় এসেছে এবং ভবিষ্যতের দিকে আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই সম্প্রসারিত বিশ্বের একটি ক্ষুদ্র অংশই আমরা দেখতে পাই এবং পর্যবেক্ষণ করতে পারি। কিন্তু  সকল গ্রহ, নক্ষত্র ও ছায়াপথগুলোর গতিপথ ও পরিবর্তন যেহেতু নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম বিধি মেনে চলে, সেই নিয়ম বিধি অনুসরণ করে আমরা মহাবিশ্বের অতীত ও ভবিষ্যৎ অবস্থা জানতে পারি। বস্তু জগত কখনো তার নিয়ম বিধির ব্যত্যয় ঘটায় না। বস্তু জগতের যে ক্রম বিবর্তন সেটার সম্ভাবনা ও নিয়ম বিধি পূর্ব অবস্থাতেই রয়েছে তাই সেই নিয়ম বিধি তাকে পরবর্তী রূপান্তর অবস্থায় যেতে সহায়তা করে। এর জন্য বাইরের কোন হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয় না।  সম্প্রসারিত মহা বিশ্বের আদি অবস্থার পরিসর ছিল অতি ক্ষুদ্র। শক্তির সংরক্ষণ নীতি অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বের সকল শক্তি সেই সংকুচিত অবস্থার ক্ষুদ্র পরিসরে কেন্দ্রীভূত ছিল। সেগুলো প্রচণ্ড তাপীয় অবস্থায় বিরাজ করছিল। বর্তমান বিশ্বের সকল বস্তু, অণু পরমাণু, কোয়ার্ক পার্টিকেলগুলোর অস্তিত্ব সেই প্রচণ্ড তাপীয় অবস্থায় সম্ভব ছিল না। কিন্তু সেই তাপীয় অবস্থায় পরবর্তীতে বস্তু জগত গঠনের সম্ভাবনা লুকায়িত ছিল। বিশ্ব সম্প্রসারণের ফলে প্রচণ্ড তাপীয় অবস্থা শীতল হতে থাকে। তাপীয় অবস্থা যখন কোয়ার্ক বা কণা গঠনের শর্তে পৌঁছায় তখন সকল পার্টিকেল ও বলের উদ্ভব ঘটে। পার্টিকেল ও বলের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নিয়ম বিধির অধীন হয়ে পরে। এই পর্যায় থেকে কসমিক বিজ্ঞানীগণের বস্তুর আচরণের সূত্রগুলো কার্যকর হয়ে উঠে।

সুতরাং মহাবিশ্বকে জানার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের দুইটি সীমা রয়েছে। এক, মহা বিশ্বের আদি অবস্থা যেখানে বিশ্ব অতি ক্ষুদ্র পরিসরে প্রচণ্ড তাপীয় অবস্থায় ছিল। এই অবস্থায় এখন পর্যন্ত জানা বিজ্ঞানীদের কোন সমীকরণ কাজ করে না। কারণ সমীকরণগুলি বস্তু ও বলের উপর কার্যকর। স্পেস টাইমের যাত্রা সেখান থেকেই শুরু। সুতরাং মহাবিশ্বের আদি অবস্থার পূর্বে কি অবস্থা ছিল সেটা জানা সম্ভব হয়ে উঠেনি। দুই, অন্যদিকে মহা বিশ্বের সম্প্রসারিত বর্তমান অবস্থায় মহা বিশ্বের সীমানার বাইরে কি আছে সেটা জানাও সম্ভব হয় না। কারণ দূরবর্তী কোন অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হলে আলো বা রেডিয়েশনের উপর নির্ভর করতে হয়। যেহেতু আলো, রেডিয়েশন বা গ্রেভিটেশনাল ওয়েভ চলে স্পেস টাইমের পথ ধরে সেহেতু স্পেস টাইমের বাইরে কোন পর্যবেক্ষণ সম্ভব নয়।

তাই মেটা-ফিজিক্স দার্শনিকদের জানার পরিধি এই মহাবিশ্বর সীমানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মহা বিশ্বের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে এবং মহাবিশ্ব কোথায় সম্প্রসারিত হচ্ছে এই সম্পর্কে মেটা-ফিজিক্স দার্শনিকরা অজ্ঞ। তবে তারা দেখেছেন এই মহাবিশ্ব শুরু থেকে এ পর্যন্ত কিছু নিয়ম বিধি অনুসরণ করেই রূপান্তরিত হয়েছে এবং এই রূপান্তরের পিছনে বাহ্যিক কোন কিছুর অবদান নেই। মেটা-ফিজিক্স দার্শনিকরা বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্যের বাইরে কোন ধারণা দিয়ে কোন কিছুর সিদ্ধান্তে আসেন না। তবে তারা সব সময় প্রচেষ্টা করে যান সত্য জানার পদ্ধতিগুলো আবিষ্কার করতে।

এই মহা বিশ্বের বাইরে কিছু আছে কি নাই এই প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানীরা দিতে পারেননি। কিন্তু এই মহাবিশ্বের অভ্যন্তরেই আছে কি নাই এর একটি সংমিশ্রণ অবস্থা রয়েছে। গ্রহ নক্ষত্র এবং বৃহৎ বস্তু অবস্থায় প্রকৃতি যে আচরণ বিধি অনুসরণ করে, কণা এবং কোয়ার্ক অবস্থায় প্রকৃতির নিয়ম বিধি অন্য রকম। এই অবস্থাকে বস্তুর কোয়ান্টাম অবস্থা বলে। এখানে কোয়ান্টাম ফিল্ড বলে একটি ক্ষেত্র রয়েছে। এই ক্ষেত্রকে আমরা একটি জল ভর্তি চৌবাচ্চা হিসেবে কল্পনা করতে পারি। বৃষ্টি পড়লে জলের উপরি তল চঞ্চল হয়ে উঠে। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা জলের উপরি তলকে একবার নীচে নিয়ে যায় পরক্ষণে উপরে উত্থিত করে। জলের স্থির অবস্থা হোল কোয়ান্টাম ফিল্ডের ভেকিউম অবস্থা অর্থাৎ যেখানে কোন কণার অস্তিত্ব নাই। আর যেখানে জলের তল উত্থিত হচ্ছে সেটাই কোন কণার অস্তিত্ব। আর যেখানে জলের তল নীচে দেবে যাচ্ছে সেটা হোল এন্টি কণার অস্তিত্ব। কোয়ান্টাম পরিসরে কোন ভেকিউম অর্থাৎ নাই অবস্থা থাকতে পারে না। এখানে সর্বদা কণার অস্তিত্ব তৈরি হচ্ছে সাথে সাথে তার একটি এন্টি কণাও তৈরি হচ্ছে। এই দুই কণা পরক্ষনে একসাথে মিলিত হয়ে অস্তিত্বহীন হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় কণা কোয়ান্টাম ফিল্ডের ভাইব্রেশন বা তরঙ্গ ছাড়া আর কিছুই নয়। এখানে একই সাথে আছে বা নাই এর টানা পোড়ন চলছে।  এই কণারই আর একটি অবস্থা হোল সকল বস্তু জগত বা মহা বিশ্ব। আমি আপনি সকলেই এই কণার বস্তুগত অবস্থা। মহা বিশ্বের আদিতে এই মেটার ও এন্টি মেটারের টানা পোড়ন চলছিল। এই টানা পোড়নে যে শক্তির প্রয়োজন হয় তা ই প্রচণ্ড তাপীয় অবস্থার কারণ। কোন কারণে এই মেটার ও এন্টি মেটারের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেলে  এন্টি মেটারের তুলনায় মেটারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং মহা বিশ্ব প্রচণ্ড গতিতে সম্প্রসারিত হতে থাকে।

সুতরাং এই মহাবিশ্বের অভ্যন্তরে প্রকৃতির যে নিয়ম বিধিগুলো দেখতে পাই তার মৌলিক দিকগুলো হল: এক, প্রকৃতিতে কোন ভেকিউম বা শূন্য অবস্থা থাকতে পারে না। শূন্য অবস্থা তৈরি হবার উপক্রম হলেই সেখানে কণার অস্তিত্ব জেগে উঠে। দুই, প্রকৃতিতে যা কছু আছে তার সবই কণা ও কয়েকটি বল দ্বারা গঠিত। তিন, প্রকৃতির প্রতিটি অবস্থা তার পূর্ববর্তী অবস্থার রূপান্তর। চার, প্রতিটি অবস্থার আচরণ তার পূর্ববর্তী অবস্থার আচরণ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

প্রকৃতির এই নিয়মগুলো থেকে আমরা ধারনা করতে পারি এই মহা বিশ্বের প্রাকৃতিক অবস্থা অন্য একটি প্রাকৃতিক অবস্থার রূপান্তরিত ফল। এই দুই অবস্থার আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই মহাবিশ্বের আচরণগত নিয়ম বিধি দিয়ে অন্য অবস্থার আচরণ জানা সম্ভব নয়। সুতরাং এই মহাবিশ্বের বাইরের অবস্থা নিয়ে আমরা যাই কিছু ধারণা করি সেগুলোর সবটাই কল্পনা প্রসূত।

আবহমান কাল ধরে মানুষ কি জানতে চায়? -
Mahbubur Rahman
Feb. 23, 2025 | বিজ্ঞানমনস্কতা | views:275 | likes:2 | share: 0 | comments:0


 আদিম যুগে মানুষ খুব বেশি মাত্রায় প্রকৃতির উপর নির্ভর ছিল। প্রকৃতি যেমন তাদের সুফল বয়ে আনত তেমনি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও কম ছিল না। প্রকৃতির এই পরিবর্তিত চরিত্রের বস্তুগত ব্যাখ্যা তারা খুঁজে পেত না। তাই এই শুভ ও অশুভ  রুপের কারণ হিসেবে তারা অদৃশ্য কোন শক্তির হাত রয়েছে বলে কল্পনা করে নেয়। প্রবৃত্তিগত ভয়ের অনুভুতি থেকে উৎসারিত শুভ ও অশুভ অদৃশ্য শক্তির ধারণা  তাদের মস্তিষ্কের স্মৃতিকোষে এমনভাবে গেঁথে যায় যে এগুলো সত্য বলে বদ্ধমূল ধারণায় পরিনত হয়। অব্যাখ্যায়িত অসংখ্য বিষয়ের কাল্পনিক ব্যাখ্যার জগত নিয়ে তাদের ভাবগত জ্ঞানের পরিধি বাড়তে থাকে।

     জন্ম ও মৃত্যু মানুষের অনুভূতির জগতকে সব সময় আলোরিত করে। আদিম সমাজের মানুষ জন্ম ও মৃত্যুকে নিয়ে বিভিন্ন ব্যখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছে, তৈরি করেছে বহু কল্প কাহিনী মিথ। তাদের পূর্ব পুরুষেরা কোথা থেকে আসল, এই টেরিটরি তাদের কে দিয়েছে, মৃত্যুর পর প্রবীণেরা কোথায় চলে যায়, প্রবীণেরা কি সব সময় অদৃশ্যে থেকে তাদের রক্ষা করে চলছে ইত্যাদি প্রশ্নের জবাব তারা তাদের ভাষার তথ্য ভাণ্ডারে সংগ্রহ করে রেখেছে। পৃথিবীর অসংখ্য ট্রাইবাল সমাজে অসংখ্য মিথ ও বিশ্বাস রয়েছে। এইসব মিথের একটি হোল বিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে ব্যাখ্যা। আফ্রিকান অনেক উপজাতি বিশ্বাস করে বিশ্বের জন্ম হয়েছে একটি ডিম থেকে। ডগন উপজাতিরা বিশ্বাস করে সৃষ্টিকর্তার জোড় আত্মা নুম্মু একটি স্বর্গীয় ডিম থেকে জন্ম লাভ করে। অনেক উপজাতিরা বিশ্বাস করে পৃথিবী গঠিত হয়েছে একটি বিড়াটকায় সাপের শরীর থেকে। বেনিনের ফণ লোকেরা মনে করে মাউ (চাঁদ) ও লিসা (সূর্য) এই দুই সৃষ্টি দেবতার বড়ছেলে গু পৃথিবীতে আসে লোহার এক তলোয়ারের রুপে এবং পরবর্তিতে কামার হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে। তার কাজ ছিল মানুষের বসবাসের জন্য পৃথিবীকে প্রস্তুত করা। সে মানুষকে বিভিন্ন হাতিয়ার বানাতে শেখায় এবং সেগুলো ব্যবহার করে শেখায় কিভাবে ফসল চাষ করা যায় ও কিভাবে ঘর বাড়ী বানানো যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার সান লোকেরা (বুশমেন) মনে করে সৃষ্টি কর্ম করেন ডক্সোই নামে এক আত্মা। যিনি একই সাথে মানুষ বা ফুল বা পাখী বা কোন সরীসৃপ। আমেরিকান আদিবাসীরা মনে করে একজন পরম আত্মা বিশ্ব জগত সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু সৃষ্টির শুরুটা ঘটিয়েই তিনি তার দ্বায়িত্ব শেষ করে স্বর্গে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। সৃষ্টির পরবর্তি খুটিনাটি বিষয় এবং প্রতিদিনের কার্য্যক্রম পরিচালনা করেন অন্যান্য দেবতারা। তাদের মতে আকাশ পিতা ও ধরিত্রী মাতা সৃষ্টি জগতের গুরুত্বপূর্ণ দুটি শক্তি। পরম আত্মা আকাশ, পৃথিবী, শুকতারা, সন্ধ্যাতারা এবং অন্যান্য গ্রহ দেবতাদের মধ্যে বিভিন্ন কাজ ভাগ করে দিয়েছেন। লাকোটার লোকেরা মনে করে আকাশ, সূর্য্য, বাতাস, পৃথিবী এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বহু উপাদান, মানুষ, আধ্যাত্মিক জগত সবকিছুই একজন চরম স্বত্বার বহু গুণ। দক্ষিণ পশ্চিম আমেরিকান আদিবাসীদের সৃষ্টি তত্বের পৌরাণিক কাহিনী আবার ভিন্ন ধরণের। তাদের কাহিনীতে রয়েছে সৃষ্টির শুরুতে পৃথিবী সাগরের নিচে নিমজ্জিত ছিল। একটি হাস বা কচ্ছপ সাগরের নীচ থেকে কিছু মাটি পিঠে করে উপরে নিয়ে আসে। সেই মাটি দিয়েই পৃথিবীর সৃষ্টি। এই মিথ উত্তর ইউরোপ ও এশিয়াতেও রয়েছে। ইরোকুইস বাসীরা এই মিথের সাথে আরো কিছু যোগ করেন। সেই মতে আকাশ দেবী আতাহেন্সিক স্বর্গের মেঝে ফুটো করে দিলে সেখান দিয়ে একজন নারী নিচে সাগরে পড়ে যান। তাকে দাঁড়াবার ও বিচরণের স্থান দেবার জন্যই সাগরের গভীর তলদেশ থেকে হাঁস কাঁদা তুলে আনে এবং কচ্ছপের পিঠে তা বৃস্তিত করে পৃথিবী তৈরি করা হয়।

মৃত্যু সম্পর্কেও মানুষের বিভিন্ন মিথ রয়েছে। আফ্রিকা জুড়ে এই বিশ্বাস প্রচলিত আছে যে সর্বোচ্চ দেবতা মানুষকে অমর করে সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন কিন্তু কোন ভুলের জন্য সেটা হয়নি। সিরা লিয়ন অঞ্চলের লোকেরা মনে করে মানুষের অমরত্বের সংবাদ নিয়ে একটি কুকুরকে পাঠানো হলে সে পথিমধ্যে খাবারের সন্ধান করতে করতে দেরী করে ফেলে। ইতিমধ্যে একটি ব্যাঙ মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে আগেই পৌঁছে যায়। ফলে মৃত্যু মানুষের একমাত্র পরিণতি হিসেবে থেকে যায়।

এভাবে জন্ম, মৃত্যু, মানুষ ও জগতের উৎপত্তি সম্পর্কে আদীম সমাজ থেকে শুরু করে বর্তমান যুগের অসংখ্য ট্রাইবাল সমাজ এমন কি আধুনিক সমাজের মানুষের মনো জগতে বিভিন্ন মিথ জোরালো ভাবে বিরাজ করছে। এই সমস্ত মিথের উপর নির্ভর করেই মানুষ্য সমাজে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক আচার আচরণ, জীবনাচরণের রীতি নীতি নৈতিকতা, সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন ভাষার তথ্য ভাণ্ডার এই সমস্ত জ্ঞান সংরক্ষিত করে রেখে পরবর্তি প্রজন্মে সঞ্চারিত করছে। এই সমস্ত সামাজিক জ্ঞান একদিকে যেমন সামাজিক একাত্বতা ধরে রাখে, অপর দিকে বিভিন্ন সমাজের স্বাতন্ত্রতাও বজায় রাখে।

এক সময় বস্তুগত জ্ঞানের প্রভাব থেকেও ভাবগত জ্ঞানের প্রভাব অনেক বেশি জোড়ালো হয়ে উঠে। ক্রমশ ভাবগত জ্ঞানের সামাজিকিকরণ হওয়ার ফলে মানুষ একসময় এই জ্ঞানের ভিত্তিতেই বস্তুগত জ্ঞানএর সত্যতা যাচাই করতে শুরু করে দেয়। ফলে বস্তুগত জ্ঞানের গ্রহণ যোগ্যতা নির্ভর করে ভাবগত জ্ঞানের দ্বারা অনুমোদনের উপর।

    সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আবহমান কাল ধরেই মানুষের মনে একই জিজ্ঞাসা এই বিশ্ব জগতের সৃষ্টির রহস্য কি? এই জগত সৃষ্টির পেছনে কি কোন উদ্দেশ্য কাজ করছে? জন্ম মৃত্যুর রহস্যটাই বা কি? বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বিভিন্ন ভাবে এর জবাবও রয়েছে। পাশাপাশি বিজ্ঞানের জবাবটাও আমাদের জানা প্রয়োজন।


জ্ঞানের উৎস কী? কোন উৎসে মানুষ উৎসাহী? -
Mahbubur Rahman
Feb. 18, 2025 | বিজ্ঞানমনস্কতা | views:182 | likes:9 | share: 2 | comments:0

মানুষ তার ইন্দ্রিয়র মাধ্যমে বাইরের জগত সম্পর্কে জানতে পারে এবং এই তথ্যগুলো 

মস্তিষ্কের কোষে জমা থাকে। বিবর্তন ইন্দ্রিয়গুলোকে ততটুকুই দক্ষ করেছে 

যতটুকু হলে সে বেঁচে থেকে বংশ বিস্তার করতে পারে। বাইরের জগতের পুরোপুরি 

সত্য তথ্য তার ইন্দ্রিয়ে ধরা পরে না। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জানার পরিধি  সত্যের

 একটি ছায়া মাত্র।

 

 দর্শন ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে মানুষ আলোকিত বস্তুর আকার ও রঙের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়। কিন্তু আলো কম থাকলে সে রঙ সম্পর্কে ভ্রান্ত তথ্য লাভ করে। আবার একই আকারের কাছের বস্তুর তুলনায় দূরের বস্তুকে ছোট দেখতে পায়। একটি বড় গাছ ও একটি ছোট গাছের পার্থক্য বুঝতে পারে কিন্তু গাছটি কত হাত লম্বা সেটা শুধু দেখে বুঝতে পারে না।

 শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে মানুষ বাইরের জগতের বিভিন্ন শব্দ শুনতে পায় এবং শব্দের উৎস কোন দিকে সেটা মোটামুটি ধারণা করতে পারে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে সে বুঝতে পারে শব্দের সাথে কোন না কোন বস্তু বা প্রাণীর সম্পর্ক আছে।    সে যদি একটি বিকট শব্দ শুনে সেদিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে একটি হাতি রয়েছে তাহলে সে হাতির সাথে সেই বিকট শব্দের একটি সম্পর্ক খুঁজে পায়। এভাবে মস্তিষ্ক একটি সিদ্ধাতে আসে যে সকল শব্দেরই একটি উৎস রয়েছে। কিন্তু শব্দ যে একটি তরঙ্গ এটা সে তার শ্রবণ ইন্দ্রিয় দ্বারা বুঝতে পারে না।

 ইন্দ্রিয়ের দ্বারা তথ্য সংগ্রহের পর মস্তিষ্ক সেগুলো একটার সাথে আর একটা তুলনা করে চিনে রাখে এবং কোন তথ্যের সাথে কোন তথ্যের সম্পর্ক রয়েছে সেগুলোও স্মৃতি-কোষে জমা রাখে। বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে সকল প্রাণীর জন্য এতটুকু ভাসাভাসা জ্ঞানই যথেষ্ট। বেঁচে থাকার জন্য বাইরের জগতে কোন ঘটনা সম্পর্কে যতটুকু প্রাক ধারণা করা প্রয়োজন সেটুকু এই জ্ঞান থেকেই সম্ভব।

 কিন্তু মানুষের মস্তিষ্ক এর থেকে ব্যতিক্রম। তার মস্তিষ্ক আরও বেশি বিকশিত হয়েছে। সে আরও বেশি প্রাক ধারণা করতে চায় এবং সে ইন্দ্রিয় দ্বারা প্রাপ্ত তথ্য থেকে আরও বেশি সত্যের কাছাকাছি যেতে চায়।

 মানুষ সত্য জানার দুটি পথ খুঁজে পায়। একটি হোল ইন্দ্রিয় লব্ধ ভাসা ভাসা জ্ঞান থেকেই অজানা তথ্য সম্পর্কে একটা ধারণায় আসা। আর একটি হোল পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপের দ্বারা তথ্যের সত্যতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। প্রথম পথে মুনি, ঋষি ও দার্শনিকেরা সত্যের অন্বেষণ করে থাকে। তাদের পথ হোল ধ্যানের পথ। যখন কোন তথ্যের কোন কার্যকারণ সম্পর্কখুঁজে পায় না তখন ইন্দ্রিয় লব্ধ জ্ঞান থেকে যুক্তির মাধ্যমে একটি প্রাক ধারণায় উপনীত হয়। মেঘের গুরু গুরু শব্দের নিশ্চয় কোন উৎস আছে, প্রাক ধারণা হোল এটা বিভিন্ন দেবতাদের যুদ্ধের ঢাল তলোয়ারের শব্দ।

ভূমিকম্পে ধরণী কেঁপে উঠার কারণ হোল পৃথিবীটা একটা ষাঁড়ের মাথায় আছে, সে 

মাথা নাড়ালেই ভূমিকম্প হয়। এভাবে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের কোন কিছুই আর অজানা

থাকে না। মুনি ঋষি ও দার্শনিকদের কাছে জগতের সব কিছুরই ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে

 এই সত্য জ্ঞানের ব্যাখ্যা বিভিন্ন মুনির কাছে বিভিন্ন।

 

 দ্বিতীয় পথে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা লব্ধ ফলাফলের উপর তাদের সত্য জ্ঞান অর্জিত হয়। ইন্দ্রিয় লব্ধ জ্ঞানের গভীরে যাওয়ার জন্য তারা পরিমাপ পদ্ধতির আশ্রয় নেন। সাধারণ মানুষ যখন এক ঝাঁক পাখী দেখতে পায় তখন বিজ্ঞানীরা গণনা করে দেখেন কয়টা পাখী। এভাবে গণনা পদ্ধতি সত্য তথ্য জানার একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। তারা একটি সমকোণী ত্রিভুজের দুটি জানা বাহুর দৈর্ঘ্য থেকে অপর বাহুর দৈর্ঘ্য জানার সূত্র জানতে পারেন। তারা কোন বস্তুর ওজন মাপার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তারা এক দিনকে ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ডে ভাগ করে নিয়ে সময় মাপতে পারেন। সময় থেকে তারা কোন বস্তুর গতিও মাপতে পারেন। এই মাপার ক্ষমতা মানুষকে ইন্দ্রিয়ের সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে যেতে সাহায্য করেছে। সে এখন বস্তু ও শক্তি জগতের সত্য তথ্য জানার ক্ষমতা অর্জন করেছে। সে জানতে পেরেছে জগতে কি কি বস্তু ও শক্তি আছে এবং তাদের মধ্যকার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া কি।

 

বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত চারটি শক্তি শনাক্ত করতে পেরেছে এবং এদের কি কাজ সেই তথ্যও তারা জানে। তারা জেনেছে পরমাণুরও ক্ষুদ্র ডজন খানেক পার্টিকেল ও চারটি শক্তির সমন্বয়েই এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছু সৃষ্ট হয়েছে। পার্টিকেলগুলোও এক 

ধরণের তরঙ্গ শক্তি। স্থান কালেরও আবির্ভাব হয়েছে এই বিশ্ব হওয়ার সময়ে। এই 

স্থান কালে শূন্য স্থান বলে কিছু নাই। কোথাও শূন্যতার সৃষ্ট হওয়ার উপক্রম 

হলেই সেখানে বস্তু অস্তিত্ব লাভ করে। বিজ্ঞানীদের এই সমস্ত জ্ঞান হল গবেষণা

 দ্বারা প্রমাণিত জ্ঞান। যে প্রাক ধারণা প্রমাণিত হয়নি সেই জ্ঞান তারা গ্রহণ করেন না। বস্তু জগতের অনেক কার্যকারণ সম্পর্ক এখনো অজানা রয়েছে।বিজ্ঞানীরা সেগুলোর ভাববাদী ব্যাখ্যা দিতে যান না। সেগুলো সম্পর্কে তারা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

 

বিজ্ঞানের আর একটি ক্ষেত্র হোল জীব বিজ্ঞান। অচেতন বস্তু কিভাবে চেতনা লাভ করল সেটা এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্যময়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন জানে কখন থেকে জীবনের শুরু হয়েছে। তারা জানতে পেরেছে যে জীবনের বিল্ডিং ব্লক হোল ডিএনএ ও আরএনএ। এরা এমন ভাবে সজ্জিত যে উপযুক্ত পরিবেশ পেলে তাদের প্রতিলিপি তৈরি করে। প্রতিলিপি তৈরির ক্ষমতাকেই আমরা জীবন বলি। ভাইরাসের সুক্ষ্ণ আবরণের ভিতরে এই ডীএনএ জিন রয়েছে। প্রতিকূল অবস্থায় এরা জীবিত নয়। কিন্তু অনুকূল পরিবেশে তারা পোষকের কোষে প্রবেশ করে তাদের জিনের প্রতিলিপি তৈরি করতে থাকে। ভাইরাসের অণুতে এমন কোন আত্মার অস্তিত্ব নেই যে সে পোষককে খুঁজে তার কোষে প্রবেশ করবে। পোষকের কোষের সংস্পর্শে আসলেই পোষক কোষ তাকে গ্রহণ করে নেয়। এই প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। পোষকের কোষের জিন ভাইরাসের জিনের সংস্পর্শে এলে ভাইরাসের জিনের ছাঁচে প্রতিলিপি তৈরি হতে থাকে।

 

 জীব বিজ্ঞানীরা গবেষণার দ্বারা প্রমাণ পেয়েছেন বিবর্তনের ধারায় এককোষী জীব থেকে বর্তমান কালের সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ সহ সকল বহুকোষী প্রাণীর দেহে বিভিন্ন কোষ-গুচ্ছের বিভিন্ন কাজ রয়েছে। সম্মিলিত ভাবেই তারা একটি প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখে। আবার তাদের দেহে বাইরের কিছু অণুজীবও রয়েছে। প্রাণী দেহের প্রতিটি কোষে যে মাইক্রোকন্ড্রিয়া রয়েছে তারা এই ধরণের অণুজীব, যারা কোষেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।এর কাজ হল শক্তি উৎপাদন করা। প্রতিটি কোষে এই অণুজীব না থাকলে কোন প্রানী বেঁচে থাকতে পারত না।

 

 আবার পরিপাকতন্ত্রে এমন অনেক ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যারা পরিপাকে সাহায্য করে। এ থেকে বুঝা যায় মানুষের সৃষ্টি কোন বিশুদ্ধ জায়গায় হঠাত করে হয়নি। বিবর্তনের পথ ধরে প্রাকৃতিক পরিবেশেই মানুষের বিকাশ হয়েছে।

 

 কিন্তু সব মানুষেরই জ্ঞানের পিপাসা এক নয়। সাধারণ মানুষ জ্ঞান অনুসন্ধানে 

আগ্রহী নয়। সে ততটুকুই জানতে চায় যতটুকু তার বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট। সে 

হোল অনুকরণ ও অনুসরণকারী। বিবর্তনই তাকে এখানে আটকে রেখেছে। মানুষ সহ সকল প্রাণীর প্রবৃত্তিগত  কিছু আচরণ রয়েছে। যে আচরণ তাকে সক্রিয় থাকতে তাড়না যোগায়। প্রবৃত্তির কারণেই সে একটি টেরিটরিতে সমাজবদ্ধ থাকে। অন্যান্য প্রাইমেটদের মতই সেই সমাজে হায়ারিকি রয়েছে। কিছু আলফা পুরুষ ও নারী সকল কাজ ও অনুসন্ধানের উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে বাকী সবাই তাদের কাজের অনুকরণ ও অনুসরণ করে। একদল হাতির পালের অগ্রভাগে থাকা আলফা পুরুষ বা নারী শুর উঁচিয়ে দূরের কোন জলাশয়ের ঘ্রাণ পেলে সেদিকে যাত্রা শুরু করে, বাকী দল তাদের অনুসরণ করে পিছু নেয়। মানুষের সমাজে এদের বিজ্ঞ বলা হয়। এরা জাগতিক সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে অনুসন্ধান করে ও তার একটা ব্যাখ্যা প্রদান করে। সাধারণ মানুষ তাদের এই পথ ও ব্যাখ্যা মনে প্রানে বিশ্বাস ও গ্রহণ করে নেয়।  বিজ্ঞ  জনেরা জন্ম, মৃত্যু, ভাল, মন্দ, শুভ অশুভ শক্তিকে তুষ্ট করার প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা প্রদান করে সেগুলো বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়। 

বিজ্ঞ জনেরা যে যন্ত্র আবিষ্কার করলো তার পিছনের প্রযুক্তি সম্পর্কে অজ্ঞ 

থেকেই সাধারণ মানুষেরা তার ব্যবহার শিখে নিল। পশু প্রবৃত্তির আর একটি দিক 

রয়েছে। খাবার সংগ্রহের তাড়না থেকে বিজ্ঞ  জনেরা জন্ম, মৃত্যু, ভাল, মন্দ, শুভ অশুভ শক্তিকে তুষ্ট করার প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা প্রদান করে সকলে সেগুলো বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়। 

বিজ্ঞ জনেরা যে যন্ত্র আবিষ্কার করলো তার পিছনের প্রযুক্তি সম্পর্কে অজ্ঞ থেকেই সাধারণ মানুষেরা তার ব্যবহার শিখে নিল। পশু প্রবৃত্তির আর একটি দিক রয়েছে। খাবার সংগ্রহের তাড়না থেকে  যৌন  তাড়না অনেক বেশি, তার থেকে বেশি ভয় থেকে পালানোর তাড়না। এই সময় তাদের হার্ট-বিট দ্রুত হতে থাকে, নিঃশ্বাস বেড়ে যায়, শরীরের সকল পেশী সক্রিয় হয়ে কাঁপতে থাকে। তাই অজানা শুভ ও অশুভ শক্তি সম্পর্কে ব্যাখ্যায় সাধারণ মানুষ বেশি আগ্রহী থাকে এবং অবচেতন মনে গেঁথে যায়। যেহেতু জ্ঞানের গভীরে তারা যায় না তাই ভয় প্রসূত ব্যাখ্যা থেকে তারা সহজে মুক্তি পায় না।

 

 বিজ্ঞ জনের এই সমস্ত জ্ঞান, আচার, আচরণ ও ব্যাখ্যা ভাষা ও পরবর্তীতে লেখনীর মাধ্যমে সামাজিক জ্ঞান ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে থাকে। এই সামাজিক জ্ঞানই বিভিন্ন সামাজিক টেরিটরিতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য নিয়ে প্রকাশ পায়। 

প্রবৃত্তিগত কারণেই মানুষ তার নিজস্ব সামাজিক টেরিটরিতে বসবাস করতে বেশি একাত্মতা অনুভব করে। আতংকিত হওয়া একটি সহজাত প্রবৃত্তি। নিজের সমাজ ও টেরিটরি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে সব প্রাণীই আতঙ্কগ্রস্ত ও বিভ্রান্ত হয়ে পরে। শিশুরা মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে  আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে তারস্বরে চিৎকার করতে থাকে। আতংকগ্রস্থতার পরবর্তী অবস্থা  নিস্তেজ হয়ে পরা, ডিপ্রেশনে ভোগা। ভিন্ন টেরিটরি,

 ভিন্ন সংস্কৃতি ও বিশ্বাসে মানুষ প্রথমে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পরে ও পরবর্তীতে ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকে। তাই ভিন্ন সমাজে গিয়ে মানুষ হয় সেই সমাজের সংস্কৃতি ও বিশ্বাস গ্রহণ করে অথবা একই সমাজের সকল প্রবাসীদের নিয়ে নিজেদের এক পৃথক টেরিটরি তৈরি করে নেয়।

 

 তাই প্রবৃত্তিগত কারণেই বিজ্ঞান ভিত্তিক জ্ঞানের চেয়ে টেরিটরি-গত সামাজিক জ্ঞানের ভিত্তি অনেক শক্তিশালী। মানুষ প্রযুক্তির সুফল গ্রহণ করে এর পিছনের বিজ্ঞানকে উপেক্ষা করেই। টেরিটরি-গত সামাজিক জ্ঞান ও বিশ্বাসের বিপরীত কোন বৈজ্ঞানিক সত্যকে তারা অস্বীকার করে টেরিটরি-গত বিশ্বাসকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্যই। 

 

সাধারণ মানুষ তার টেরিটরি-গত সামাজিক জ্ঞান ও বিশ্বাসের অনুসারী। এই অসংখ্য মত, পথ, ও বিশ্বাস নিয়েই মানব জাতি। তাই কোন মত সত্য কোন মত মিথ্যা এই বিতর্ক করে কোন লাভ নেই বরং এই বিতর্ক বিরোধিতারই সৃষ্টি করবে। এই ক্ষেত্রে বিজ্ঞ জনদেরই উচিৎ তাদের সামাজিক জ্ঞানকে বিজ্ঞান-মুখি করে ক্রমশ উন্নত করা। 

অনুসরণকারীদের উপর চাপ দিয়ে কিছুই বদলানো যাবে না।


আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929